অনলাইন ডেস্ক: ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে মাদক চোরাকারবারিদের আদান-প্রদান বাড়ছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। এজন্য রাজশাহী অঞ্চলে সক্রিয় মাদক কারবারিদের তালিকা হালনাগাদসহ বিস্তারিত তথ্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে মাদক কারবারিদের ডাটাবেজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নির্দেশে মাদক কারবারিদের তালিকা হালনাগাদ ছাড়াও তাদের সম্পর্কে অতিরিক্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মূলত মাদক কারবারিদের চলাচল ও তৎপরতা শনাক্তের মাধ্যমে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও আইনের আওতায় আনতেই এসব তথ্য নেয়া হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, অর্থলগ্নিকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কেও তথ্য নেয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্তের পর সক্রিয় কারবারি ও পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে এ কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহী অঞ্চল দেশের মধ্যে সর্বাধিক মাদকপ্রবণ এলাকা। এই অঞ্চলের অন্তত শতাধিক সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দেশে মাদক আসে ভারত থেকে। এসব মাদক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বছরব্যাপী লাগাতার অভিযান সত্ত্বেও রাজশাহী অঞ্চলে মাদকের চোরাচালান কয়েকগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি অবাধে মাদক বিক্রি ও সেবনের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। মাদককেন্দ্রিক সামাজিক সমস্যা সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা সুরক্ষা বিভাগ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে সক্রিয় মাদক কারবারি, অর্থলগ্নিকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করতে তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন ও তথ্য সন্নিবেশের (ডাটাবেজ) জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
বিভাগীয় দফতরগুলো থেকে চলতি মাসের মধ্যে এ তালিকা চাওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক লুৎফর রহমান জানান, তাদের সাত দিনের সময় দেয়া হলেও করোনা সংক্রমণের তীব্রতা বাড়ায় তালিকার কাজ সম্পন্ন করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, মাদক কারবারিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা ছাড়াও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি, হালনাগাদ ছবি সংগ্রহ করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। তাদের বর্তমান অবস্থান, আগের পেশা ও বর্তমান অবস্থান, বর্তমানে সম্পদের সম্ভাব্য পরিমাণ ও তালিকা, বাড়ি, গাড়ি, জমিজমা, রাজনৈতিক পদ-পদবি, বিদ্যমান অন্যান্য (ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলে), তার ধরন ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দফতরেও পাঠানো হবে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের কর্মকর্তারা আরও জানান, সন্দেহভাজন ও প্রমাণিত মাদক কারবারিদের এনআইডির কপি নেয়ার কারণ তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা। তাদের অতীত সম্পর্কে তথ্য সন্নিবেশ রাখা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন মাদক কারবারি ধরা পড়ার পর অনেক সময় ভুল নাম-ঠিকানা দিয়ে থাকেন। মামলা তদন্তে গিয়ে ব্যক্তির দেয়া ঠিকানায় তাকে শনাক্ত করা যায় না। আবার জামিনে বের হলে তাকে আর পুলিশ খুঁজে পায় না। তার বিরুদ্ধে অতীতে কোনো মাদকের মামলা আছে কি-না তাও জানা সম্ভব হয় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ডাটাবেজের কাজ সম্পন্ন হলে এ ধরনের সমস্যা আর থাকবে না।
রাজশাহী বিভাগীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, সক্রিয় মাদক কারবারিদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজের মধ্যে আনা হবে। দ্রুতই বিভাগের আট জেলার মাদক কারবারিদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রণয়ন সম্পন্ন হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেরোইন চোরাচালানের মূল গেটওয়ে হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী এবং পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার হাকিমপুর, চরবাগডাঙ্গা, শাজাহানপুর ও অনুপনগর এলাকা। এই পথেই ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থেকে সারা বছর বিপুল পরিমাণ হেরোইন পাচার হয়ে আসে। যার পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন চ্যানেলে এসব হেরোইন সারা দেশে পাচার হয়ে থাকে।
এই দুটি এলাকাতেই তিন সহস্্রাধিক হেরোইন চোরাকারবারি ও পৃষ্ঠপোষক সক্রিয় রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে হেরোইনের চালানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যারা আটক হন তারা শুধু বহনকারী। মাদকের মূল মালিকরা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান। এছাড়াও রাজশাহীর মতিহার থানা, কাটাখালি থানা চারঘাট ও মিরগঞ্জ এলাকা মাদকের অন্যত্তম ঘাটি। কর্মকর্তারা বলছেন, এ কাজের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজ তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিশের গ্যাং নিয়ন্ত্রণে রাজশাহীজুড়ে ৪০০ কিশোরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.